পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র - মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য

   আদিকাল থেকেই মানুষ মহাবিশ্ব ও মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে কৌতূহলী হয়ে নানা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে, এখনো তবু মহাবিশ্ব ও এর সৃষ্টি রহস্যের অনেক কিছুই মানুষের অজানা । মহাবিশ্ব সকল পদার্থ, শক্তি ও স্থান অর্থাৎ যা কিছুর অস্তিত্ব আছে তাদের সবকিছু নিয়েই মহাবিশ্ব। অন্য কথায়, অগণিত নক্ষত্ররাজ্য, ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি অনন্ত মহাকাশে ছড়ানো পদার্থ, শক্তি এইসব মিলিয়ে যে বস্তুজগত্ তারই নাম মহাবিশ্ব। অনুমান করা হয় যে, মহাবিশ্বে 109 সংখ্যক ছায়াপথ আছে। মহাবিশ্বের প্রকৃতি, উৎস ও বিবর্তন নিয়ে যে পর্যালোচনা তাকে বলা হয় সৃষ্টিতত্ত্ব (cosmology) মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত তার মধ্যে নিচের কয়েকটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ । 

  ১। মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব (Big bang theory)

  ২। সম্প্রসারণ তত্ত্ব (Expanding universe theory)

   ৩। স্পন্দনশীল তত্ত্ব (Pulsating theory)

   ৪। অবিচল অবস্থা তত্ত্ব (Steady state theory)

১। মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব : 

   এই তত্ত্বের প্রবর্তক হলেন বিজ্ঞানী জর্জ লেমিটার ( George Lemaitre)। তাঁর তত্ত্ব মতে 20 বিলিয়ন বছর পূর্বে অনুমান করা হয় মহাবিশ্বের ভর ছিল 105 kg । এই ভর মূলত একটি অতি উত্তপ্ত (= 1012 K) তাপমাত্রায় একটি অতি ঘন আগুনের গোলক হিসাবে ছিল। এই গোলকের ব্যাসার্ধ ছিল সূর্যের প্রায় দশগুণ। সুতরাং-মহাবিশ্ব একটি অতি ঘন গোলক এবং এর ঘনত্ব ছিল 1021 kgm-3। বিশ বিলিয়ন ( 20 x 109) বছর পূর্বে এক মহাবিস্ফোরণ ঘটে। ফলে অগ্নিগোলকটি অসংখ্য টুকরায় বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি ও নক্ষত্ররূপে অতি উচ্চ বেগে সকল দিকে ছড়িয়ে পড়ে। জজ লেমিটার এই তত্ত্ব প্রদান করেন এবং এর Big-bang নামটি জর্জ গ্যামোর (George Gamow) দেওয়া।

২। সম্প্রসারণ তত্ত্ব : 

   এই তত্ত্ব মতে সকল গ্যালাক্সি পৃথিবী থেকে দূরে সরে যেতে থাকবে এবং আমরা একটি শূন্য বা খালি মহাবিশ্ব পাব। এর কারণ হলো মহাবিশ্বের ধারাবাহিক বা অবিরত প্রসারণের ফলে অনেক অনেক গ্যালাক্সি মহাবিশ্বের সীমানার বাইরে চলে যাবে এবং হারিয়ে যাবে।

৩। স্পন্দনশীল তত্ত্ব :  

   এই তত্ত্বের মতে মহাবিশ্ব অনির্দিষ্টভাবে প্রসারিত হতে পারে না। একটি নির্দিষ্ট অবস্থার পর মহাকর্ষীয় আকর্ষণের কারণে এই প্রসারণ থেমে যাবে এবং মহাবিশ্ব পুনরায় সঙ্কুচিত হয়ে আসবে। সঙ্কুচিত হয়ে মহাবিশ্ব একটি সংকট আকারে পৌঁছালে এটা পুনরায় বিস্ফোরিত হবে এবং নতুন করে প্রসারণ ও তারকার সঙ্কোচন ঘটবে। ফলে মহাবিশ্বের সীমা একবার বড় ও একবার ছোট হয়ে অর্থাৎ সীমানা স্পন্দিত হবে, এজন্য কখনো কখনো একে স্পন্দনশীল মহাবিশ্ব বলা হয়। এ তত্ত্বের ভিত্তিতে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায় যে, 8 × 109 বছর পরপর মহাবিশ্বের প্রসারণ ও সঙ্কোচন ঘটে।

৪। অবিচল অবস্থা তত্ত্ব : 

   এই তত্ত্বের প্রবর্তক হলেন জ্যোতি বিজ্ঞানী গোল্ড, বন্ড ও ফ্রেড হোয়েল । এই তত্ত্বের মতে মহাবিশ্ব একটি অবিচল বা স্থির অবস্থায় পৌঁছে গেছে এবং সকল স্থান থেকে সকলের নিকট একই রকম দেখায়। মহাবিশ্বের মোট গ্যালাক্সির সংখ্যাও একটি স্থির অবস্থায় পৌঁছেছে। মহাবিশ্বের পর্যবেক্ষণযোগ্য অংশ থেকে যদিও কিছু গ্যালাক্সি হারিয়ে যাচ্ছে, নতুন গ্যালাক্সি তৈরি হয়ে গ্যালাক্সির সংখ্যা সমান করছে। অবিচল অবস্থা তত্ত্ব, যাকে অবিরত তৈরি তত্ত্বও বলা হয়। এর ভিত্তি হলো পদার্থ ও শক্তির আন্তঃরূপান্তর ।

Content added || updated By